নিজস্ব সংবাদদাতা ( হুগলী ) : বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা উৎসব বাকি মাত্র হাতে গোনা দিন। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে হবে পুজো, আদৌও পুজো হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মৃৎশিল্পীরা সহ বারোয়ারি পুজো কমিটি গুলি।নেই প্রতিমা তৈরির বায়না।কিছু পুজো কমিটি বেশি উচ্চতায় প্রতিমা তৈরির বায়না দেওয়ার পর তা বাতিল করে দিয়েছে বলেও বলেন তারা। রাজ্য সরকারের কোনও নির্দেশনামা না দেওয়ার কারণে।তাদের দাবি অবিলম্বে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করুক। দুর্গাপুজো করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে সরকারি নিয়মাবলী। কারণ গুজরাত সরকার গণেশ প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে নির্দেশ জারি করে ছিলেন বলে দাবি করছেন মৃৎশিল্পীরা। বাড়তি উচ্চতার প্রতিমা তৈরি হলে বেশি সংখ্যক লোকজনের ভীড় সমাগম এড়ানোর জন্য এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এই রাজ্যে কীভাবে দুর্গাপুজো হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।পুজো করা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাবে কিনা,তা নিয়েও উদ্বিগ্নে রয়েছে পুজো উদ্যোক্তরা।ফলে শূন্যতা গ্রাস করেছে প্রতিমা শিল্পীদের চোখে মুখে।গত কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধের কারনে অনেক মৃৎশিল্পী ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে জীবিকা নির্বাহের জন্য।জেলার শ্রীরামপুরের চাতরা,সিঙ্গুর,হরিপাল,ধনিয়াখলি, তারকেশ্বর সহ বিভিন্ন জায়গার মৃৎশিল্পীরা একজোট হয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার কথা ভাবছে। আশায় রয়েছে সরকারি ক্ষতিপূরণের সাহায্যের।এই পেশায় যুক্ত অনেক মৃৎশিল্পীদের কেউ করছে ১০০ দিনের শ্রমিকের কাজ,কেউবা করছে সবজি বিক্রি,কেউবা করছে ইমারতি দোকানে মুটেগিরির কাজ।সিঙ্গুরের খাসেরচক গ্রামের মৃৎশিল্পী বিশ্বনাথ চন্দ্র ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কথা বলার শক্তি হাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১০০ দিনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি ।বন্ধ রয়েছে তার প্রতিমা তৈরির কারখানা।জীবনে কল্পনা করতে পারেনি শিল্পী সত্তা হাড়িয়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে।তবুও আশায় রয়েছেন কবে সুস্থ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে শিল্পীসত্তা জীবন। "হিমাংশু জানা " মৃৎশিল্পী বলেন সরস্বতী পুজোর পর থেকে আমাদের কাজ নেই।প্রতিমা তৈরি করে আমাদের সংসার চলে। আমাদের মত শিল্পীরা কেউ বালি, সিমেন্ট বইছে, কেউ আবার দোকানে কাজ করছে। ১০০ দিনের কাজ কিছু শিল্পীকে করতে দেখা যাচ্ছে। কি করবো পেটতো কথা শুনবে না। আমাদের যা অবস্থা কোন কোন বাড়িতে ঠিক মত রান্না হচ্ছে না। মৃৎশিল্পীদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে বিডিও, এমএলএ, এমপি থেকে সবাইকে আমাদের সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের দিকে কেউ সাহায্যের করেনি। আমাদের দাবি সরকার থেকে মৃৎশিল্পীদের সরকারি ঋণ দেবার ব্যবস্থা ব্যবস্থা করা হোক। কার কাছে যাবো বুঝতে পারছি না। যার কাছে যাচ্ছি সবাই হাত তুলে নিচ্ছে বলছে কিছু করার নেই বলছে। প্রতিমার অর্ডার নেই। সবাই সাহায্য পাচ্ছে কিন্তু মৃৎশিল্পীদের সরকার দেখছেন না। কোন সরকারি নির্দেশিকা নেই। "শঙ্কর জানা "মৃৎশিল্পী জানান তিনটে প্রতিমার অর্ডার পেয়েছিলাম কিন্তু কমিটির লোকজন সঠিক ভাবে বলতে পারছেনা প্রতিমা নিয়ে যাবে কিনা। রাজ্য সরকার যদি নির্দিষ্ট মতামত দেন পুজো কমিটি গুলিকে। তাহলে আমরা মনে শক্তি পাবো। এখন পর্যন্ত কোন কাজকর্ম কিছুই নেই। আমি গুজরাটে গণেশ প্রতিমা কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেখানকার সরকার নির্দেশিকা দিয়ে বলে দিয়েছিলেন দেড় ফুট থেকে দু ফুটের বেশি প্রতিমা বড় হবে না। প্রতিমা বাড়িতে পুজো করতে হবে। প্যান্ডেলে পুজো করা যাবে না। জমায়েত করা যাবে না। আমাদের এখানকার রাজ্য সরকার যদি কিছু নির্দেশিকা দেন তাহলে আমাদের উপকার হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি একজন শিল্পী। তিনি শিল্পীদের মর্যাদা জানেন। আমরা হাহাকারের মধ্যে রয়েছি। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন শিল্পীদের কিছু একটা ব্যবস্থা করুন। যাতে তারা বাঁচে, যাতে তারা শিল্পটাকে বাঁচাতে পারে। আমাদের ভয় করছে। কারণ প্রতিমা তৈরি করব শেষে কমিটি গুলো না নিয়ে গেলে। তখন আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। আর ঘুরে দাঁড়াবার কোন রাস্তা থাকবে না। অন্য এক মৃৎশিল্পী "বাপন মাইতি" জানান চারটি বড় প্রতিমার অর্ডার পেয়েছিলাম। তৈরিও করেছিলাম। পরে তারা নেবে না বলে দিয়েছেন। নতুন করে কোন অর্ডার নেই। যে সমস্ত পুজো কমিটি দশ ফুটের প্রতিমা তৈরি করত। তারা এখন এসে বলছে পাঁচ ফুটের প্রতিমা করার কথা। আমরা চাইছি রাজ্য সরকার নির্দেশিকা দিক। যা সময় আছে ছোট প্রতিমা তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু বড় প্রতিমা তৈরি করা সম্ভব নয়।আমাদের অনুরোধ রাজ্য সরকার মৃৎশিল্পীদের বিষয়টা যদি দেখেন তাহলে মৃৎশিল্পীরা দুবেলা-দুমুঠো খেতে পারবে।